শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম - দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত

শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। এই খেজুরে রয়েছে ভিটামিন ও অন্য অন্য পুষ্টি উপাদান গুলো রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাহলে চলুন খেজুর খাওয়ার নিয়ম ও দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নি।
শুকনো-খেজুর-খাওয়ার-নিয়ম
ফলের মধ্যে পুষ্টির জন্য সেরা এই খেজুর। আমাদের মানব দেহের বিভিন্ন রোগ মুক্ত করতে সাহায্য করে এই খেজুর।খেজুরে রয়েছে আয়রন যা আমার শরীরের রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে।

পোস্ট সূচিপত্র : শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম - দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত

শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম

শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।আমাদের দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত তাও জানি না।খেজুর আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল।খেজুর বারোমাস সব জায়গায় পাওয়া যায়।এই শুকনো খেজুর (ড্রাই ডেটস) এমন একটি সংরক্ষণ প্রদ্ধতি যা প্রাকৃতিক ভাবে সূর্যের আলোতে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
শুকনো-খেজুর-খাওয়ার-নিয়ম
এই খেজুর আমাদের মানবদেহের জন্য যেমন উপকার তেমনি এই খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু যা সকলেই পছন্দ করে। এই খেজুর এ রয়েছে ভিটামিন, আয়রন, পটাসিয়াম, শর্করা,প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই খেজুরে থাকা আয়রন আমাদের শরীরের রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
এই খেজুর এ থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ করে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ ভালো জেনে থাকবেন। কোরআনে এই খেজুর নিয়ে অনেক বর্ণনা করা আছে । এই খেজুর বিশেষ করে আরব আমিরাতে বেশি হয়।

খেজুর এর পুষ্টি উপাদান

খেজুর এর পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। খেজুর খাওয়ার আগে আমাদের খেজুরের পুষ্টি উপাদান গুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খেজুরে ভিটামিন, প্রোটিন, ও শর্করা জাতীয় অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে । তাহলে চলুন খেজুর এর পুষ্টি উপাদান গুলো বিস্তারিত জেনে নি।

প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুর এর পুষ্টি উপাদান

উপাদান নাম পরিমান
ক্যালোরি 277 ক্যালোরি
প্রোটিন 1.8 গ্রাম
ফ্যাট 0.15 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট 75 গ্রাম
আয়রন 0.9 মিলিগ্রাম
ভিটামিন A 149 IU
ক্যালসিয়াম 64 মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম 696 মিলিগ্রাম
শর্করা 63 গ্রাম
ভিটামিন C 0.4 মিলিগ্রাম
ফাইবার 8 গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম 54 মিলিগ্রাম

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। খেজুর আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। এই খেজুর বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এই খেজুর খেলে এমনিতেই অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে নিয়ম অনুসরণ করে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাহলে চলুন খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নি।

সকালে খালি পেটে

সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে আমাদের হজম শক্তি উন্নত করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি যদি ৪-৫ টি খেজুর খেতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে এই খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক চিনি আমাদের শরীরে খুব তাড়াতাড়ি শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। এতে আমরা সারাদিন ভর পরিশ্রম করতে পারি।

রাতে ঘুমানোর আগে

রাতে ঘুমানোর আগে আপনি যদি শুকনো খেজুর খেতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন। আপনি সারা দিন পরিশ্রম করে যতো শক্তি ক্ষয় হয়েছে তা পুনরুদ্ধার করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই খেজুর। রাতে ঘুমানোর আগে ৪-৫ টি খেজুর ভালো করে ধুয়ে খেয়ে ফেলুন। এই খেজুরে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের পেশির বিশ্রাম দিয়ে ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে।

ব্যায়ামের আগে ও পরে

ব্যায়ামের আগে ও পরে আমরা খেজুর খেতে পারি। এই খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। যা আমাদের শরীরে খুব তাড়াতাড়ি শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করে আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে যায়। তখন আমরা কয়েকটি খেজুর খেলে আমাদের শরীরে পুনরায় শক্তি তৈরি হয়। এতে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে।

খেজুরের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারীতা

খেজুরের উপকারীতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম অনুসরণ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। খেজুর খাওয়ার আগে খেজুরের উপকারীতা আমাদের জানা খুবই জুরুরি। তাহলে চলুন খেজুরের উপকারীতা গুলো জেনে নি।

১.হজম শক্তি বাড়ায়

আমাদের হজম শক্তি উন্নত করতে খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খেজুরে থাকা ফাইবার আমাদের খাবারকে খুব সহজে হজম করতে সাহায্য করে। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে।

২.রক্তস্বল্পতা দূর করে

আমাদের মানব দেহে বিভিন্ন কারণে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। এই রক্ত স্বল্পতা দূর করতে খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা আমাদের শরীরে খুব তাড়াতাড়ি রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই আমরা রক্ত স্বল্পতা দূর করতে খেজুর খেতে পারি।

৩.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে

আমরা মানুষ আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। তবে এই রোগ হওয়াটা কোনো অসাভাবিক বিষয় না। আমাদের অচেতনতার কারণেই এই রোগ গুলো বেশি হয়। তাই এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমরা খেজুর খেতে পারি। এই খেজুরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে। এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

৪.শক্তির উৎস

এই খেজুর একটি ভালো মানের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই খেজুরে থাকা ভিটামিন, আয়রন,পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম,শর্করা ইত্যাদি আমাদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম, খেলোয়াড় এবং প্রতিদিন অনেক পরিশ্রম করেন তাদের জন্য এই খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত আমাদের জানতে হবে। পরিশ্রম করার পর আপনি যদি ৩-৪ টি খেজুর খান। তাহলে সাথে সাথে আপনার শরীরের শক্তি সরবরাহ করে শরীরকে ভালো রাখবে।

৫.হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

খেজুর আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খেজুরে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এছাড়াও এই খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৬.চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে

খেজুর আমাদের চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই খেজুরে রয়েছে বিটা - ক্যারোটিন যা আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এই খেজুরে রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের শরীরের চোখের রাতকানা, চোখ ফোলা ও অন্য অন্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আপনি যদি নিয়মিত ৩-৪ খেজুর খেতে পারেন তাহলে আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

৭.স্মৃতিশক্তি বাড়াতে

আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এই খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খেজুরে রয়েছে ভিটামিন সি যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য। এছাড়াও মানসিক চাপ, শরীর খারাপ লাগা,মাথা ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে থাকে এই খেজুর। আপনাদের যাদের মানসিক চাপ বেশি তারা নিয়মিত ৩-৪ টি করে খেজুর খেলে পারেন।

৮.ওজন নিয়ন্ত্রণে

খেজুর আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের শরীরের ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। যদিও খেজুরে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে তার পরও আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে এই খেজুর। এছাড়াও যারা ডায়েটে রয়েছে তারাও এই খেজুর খেতে পারেন। যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা ৪-৫ খেজুর খেতে পারেন।

৯.ত্বক ও চুলের যত্নে

আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খেজুরে থাকা ভিটামিন সি আমাদের ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বক নরম রাখতে সাহায্য করে।এছাড়াও খেজুরে থাকা ভিটামিন সি আমাদের মাথার চুল পড়া বন্ধ করে চুলের গোড়া মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

১০.দাঁত ও হাড় ভালো রাখতেি

আমাদের শরীরের অন্যতম প্রধান অংশ হলো হাড়। এই খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড়গুলো মজবুত রাখতে সাহায্য করে। যাদের ক্যালসিয়াম এর ঘারতি রয়েছে তারা নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। এছাড়াও আমাদের দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই খেজুর।

পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারীতা

পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারীতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম অনুসরণ করে খেলে পুরুষদের এই খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খেজুরে থাকা ভিটামিন ও অন্য অন্য পুষ্টি উপাদান গুলো পুরুষদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে।তাহলে চলুন পুরুষদের জন্য খেজুরের কিছু উপকারীতা জেনে নি।

১.শক্তি ও স্ট্যামিনা বৃদ্ধি করে

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন যা পুরুষদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এই খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, ফরুক্টোজ,গলুকোজ ইত্যাদি যা পুরুষদের শরীরে খুব তাড়াতাড়ি শক্তি তৈরি করে এবং স্ট্যামিনা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

২.শুক্রাণুর গুনগত মান বৃদ্ধি করে

খেজুরে রয়েছে ভিটামিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, জিঙ্ক প্রোটিন ইত্যাদি যা পুরুষের শুক্রাণুর গুনগত মান বৃদ্ধি করে। এতে পুরুষদের ফাটিলিটি বাড়াতে সাহায্য করে। এই খেজুরে থাকা ভিটামিন উপাদান গুলো পুরুষের শুক্রানুকে জীবিত রাখতে সাহায্য করে।

৩.পেশি ও হাড়ের শক্তি উন্নত করে

খেজুরে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরের পেশি ও হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। একটি মানুষের প্রধান অংশ হলো পেশি ও হাড় । এই খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম,ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি আমাদের হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

৪.টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে

একটি সুস্থ পুরুষের টেস্টোস্টেরন স্বাভাবিক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খেজুরে থাকা বোরন মিনারেল পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই টেস্টোস্টেরন পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে।

৫.রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে

একটি স্বাভাবিক পুরুষের যৌন অঙ্গে রক্ত চলাচল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় রক্ত স্বল্পতার কারনে পুরুষের যৌন অঙ্গে ঠিক মতো রক্ত চলাচল করতে পারে না। এতে পুরুষের যৌন অঙ্গে খুবই মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এই খেজুরে রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন যা পুরুষের শরীরে রক্ত তৈরি করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

৬.শুক্রানু বৃদ্ধি করে

আমরা জানি একটি স্বাভাবিক পুরুষ এর শুক্রানু থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ লক্ষ শুক্রানু থেকেই বাচ্চা তৈরি হয়। বিভিন্ন কারণে পুরুষের শুক্রানু মরে যায়। এই খেজুরে থাকা ভিটামিন উপাদান গুলো পুরুষ এর শুক্রানুর মৃত্যু থেকে রক্ষা করে নতুন শুক্রানু তৈরি করতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। খেজুর আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খেজুরে থাকা ভিটামিন উপাদান গুলো গর্ভাবস্থায় মা ও বাচ্চার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো বিস্তারিত জেনে নি।

১. শক্তি বৃদ্ধি করে

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরের শক্তি কমে যেতে থাকে। এই খেজুরে থাকা ফরুক্টোজ, গলুকোজ এবং প্রাকৃতিক চিনি গর্ভবতী মায়ের শরীরের ক্লান্তি দূর করে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।

২. রক্তস্বল্পতা দূর করে

গর্ভবতী নারীদের প্রচুর পরিমানে রক্ত ক্ষয় হতে থাকে। একসময় বাচ্চা ও মায়ের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। এই খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা গর্ভবতী মায়ের শরীরের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে রক্ত স্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধ হয়।

৩. শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে

অনেক সময় দেখা যায় শিশুর মস্তিষ্কে স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে না। শিশু স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠে না। এই খেজুরে থাকা ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি ৬ শিশুর মস্তিষ্ক স্বাভাবিক ঘটাতে সাহায্য করে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

গর্ভাবস্থায় মায়ের অনেক ধরনের রোধ দেখা দিতে পারে। এই সময় গর্ভবতী মাকে অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে। এই সময় কোনো রোগ হলে বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এই খেজুরে রয়েছে ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

৫. হাড়ের গঠন উন্নত করে

অনেক সময় দেখা যায় শিশু স্বাভাবিক নয়, অনেক দুর্বল । এই খেজুরে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি উপাদান গুলো মা ও বাচ্চার দাঁত ও হাড় গুলোকে শক্তিশালী এবং সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।

৬. সন্তান প্রসব সহজ হয়

সন্তান প্রসব এর যে কষ্ট যে একমাত্র একজন মা - ই বলতে পারবে। গর্ভাবস্থায় একজন মা যদি নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। তাহলে প্রসব এর ব্যাথা এবং সময় কমে যেতে পারে। এবং স্বাভাবিক কষ্ট কমে নরমাল ডেলিভারি হতে পারে।

দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত

দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত এটা আমরা অনেকেই জানি না। খেজুর খাওয়ার আগে আমাদের খেজুর খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও দিয়ে কয়টা খেতে হবে । এসব বিষয় গুলো ভালো করে জানতে হবে। একজন স্বাভাবিক মানুষের দিনে ৩ - ৫ টি খেলেই চলে। তবে এর বেশির ভাগই নির্ভর করে , ব্যাক্তির শারীরিক অবস্থার ওপরে।

ব্যাক্তির শরীরে কি পরিমান ক্যালোরির চাহিদা রয়েছে তা বিবেচনা করে খেজুর খেতে হবে ।দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো :

৩-৫ টি খেজুর : একজন সাধারণ মানুষের জন্য দিনে ৩-৫ টি খেজুরই যথেষ্ট । একজন সাধারণ মানুষের শরীরে যতোটুকু পুষ্টি ও শক্তির ঘাটতি হয়। এই খেজুর গুলো পূরণ করতে সাহায্য করে।

১-২ টি খেজুর : ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া উচিত নয় । এই খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতি করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের দিনে ১-২ টা খেজুরই যথেষ্ট।

৫-৬ টি খেজুর : যারা দিনে অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় হয় । তাদের জন্য দিনে ৫-৭ টি খেজুর খাওয়া উচিত। যেমন : কৃষক, ক্রীড়াবিদ, সেনাবাহিনী, ইত্যাদি । খেজুর সাথে সাথে অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ করে।

শুকনো খেজুর কি ভিজিয়ে রাখা উচিত

শুকনো খেজুর কি ভিজিয়ে রাখা উচিত তা আমরা অনেকেই জানি না। হ্যা শুকনো খেজুর ভিজিয়ে রেখে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। শুকনো খেজুর খাওয়ার আগে আমাদের শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। শুকনো খেজুর ভিজিয়ে রেখে কিছুখন পর খেলে আমাদের শরীরে হজম ভালো হয়।এই খেজুরে যেহেতু প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে তাই পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর স্বাদ এবং মিষ্টতা বৃদ্ধি পায়।
শুকনো-খেজুর-কি-ভিজিয়ে-রাখা-উচিত
খেজুর পানিতে ভিজানোর কারণে এই খেজুরে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গুলো আমাদের শরীরে ভালো ভাবে শোধিত হয়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ রয়েছে তারা শুকনো খেজুর ভিজিয়ে খেতে পারেন। শুকনো খেজুর ভিজিয়ে রাখলে ফাইবার এর গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। তবে কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ ভালো হয়।

কীভাবে ভিজিয়ে খাবেন

  • রাতে একটি বাটিতে ৪-৫ শুকনো খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • সকালে খালি পেটে খেজুর এবং খেজুর রাখা পানি গুলোও খেতে পারেন এতে অতিরিক্ত পুষ্টি পাবেন।
  • এক বাটি দুধ নিন তার মধ্যে ৪-৫ টি খেজুর রেখে সকালে দুধ ও খেজুর গুলো পান করুন ।
  • এক বাটি মধু নিন তার মধ্যে ৪-৫ টি খেজুর রেখে দিন সকালে খালি পেটে খেজুর সহ মধু গুলো খেয়ে নিন ।
এভাবে শুকনো খেজুর ভিজিয়ে খেলে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। এতে খেজুরের পুষ্টির সাথে অতিরিক্ত পুষ্টি পাওয়া যায়। এতে শরীরে খুব তাড়াতাড়ি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।

শুকনো খেজুর খাওয়ার কিছু সতর্কতা

শুকনো খেজুর খাওয়ার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যদিও খেজুর আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু কিছু আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত তা জানতে হবে। তাহলে চলুন খেজুর খাওয়ার সতর্কতা গুলো জেনে নি।
  • যারা অতিরিক্ত খেজুর খান, তারা অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই খেজুর অতিরিক্ত খেলে গ্যাষ্টিক, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যাদের অ্যালার্জি, চুলকানি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়েছে তারা এই খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এই খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যা ডায়াবেটিস এর জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • সংরক্ষণ পদ্ধতি ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ছত্রাক এবং পোকামাকড় এর সংস্পর্শে না থাকে।

শেষ কথা : শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম

দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত তা আমরা অনেকেই জানি না। খেজুর খাওয়ার আগে খেজুরের সঠিক পুষ্টি পেতে হলে আমাদের অবশ্যই নিয়ম অনুসরণ করে খেজুর খেতে হবে। পরিমান মতো খেজুর খেলে আমাদের শরীরে শক্তি বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যাদের রক্ত স্বল্পতা রয়েছে তারা এই খেজুর খেতে পারেন তাহলে আপনার রক্ত স্বল্পতা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও খেজুর খেতে গিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করুন।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা শুকনো খেজুর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার যদি একটুও উপকারে এসে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। প্রিয় পাঠক আজকে এই পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

৬ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর  (FAQ)

১. খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় কখন?

খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় সকালে বা দুপুরে হতে পারে। তবে রাতে ঘুমানোর আগেও খাওয়া যায়। তবে যে কোন পরিশ্রম এর আগে খেজুর খাওয়া উচিত কারণ এটি সাথে সাথে শক্তি সরবরাহ করে।

২. খেজুর খাওয়ার পর কি পানি খাওয়া উচিত?

হ্যাঁ খেজুর খাওয়ার পর পানি খাওয়া উচিত এতে হজম ভালো হয়।

৩.খেজুর কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ?

খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি যা শর্করা বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খেজুর নিরাপদ নয়। তবে যাদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নিয়ন্ত্রণে থাকে তাদের অল্প পরিমান খেলে উপকার হতে পারে।

৪.খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে?

হ্যাঁ খেজুর খেলে ওজন বাড়তে পারে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে পরিমান মতো খেলে শরীরে শক্তি এবং পুষ্টি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৫.খেজুর কি গর্ভবতী নারীর জন্য উপকারী?

হ্যাঁ খেজুর গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার ইত্যাদি যা গর্ভাবস্থায় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।

৬. খেজুর কি খালি পেটে খাওয়া ভালো?

হ্যাঁ খেজুর খালি পেটে খাওয়া ভালো হতে পারে। কারণ এতি সাথে সাথে শরীরে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। এতে আমাদের হজম শক্তি উন্নত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা ফ্রিল্যান্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url