নিম পাতার ২০ টি উপকারিতা ও ৯ টি অপকারিতা জানুন

নিম হল একটি উদ্ভিদ।যার পাতা ব্যাবহারে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রেও নিমপাতার অনেক গুনাগুন রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা  নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
নিম-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
এই নিম পাতার গাছের পাতা থেকে শুরু করে শিকর পর্যন্ত সবকিছুই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। এই নিম পাতাতে অসাধারণ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে নিম পাতার সকল ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্র :  নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন 

 নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

 নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন। নিম পাতার অসংখ্য কিছু উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই নিম পাতা আমাদের শরীরের হজমশক্তি, দাঁত,ত্বক ইত্যাদি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই নিম পাতা গ্যাস্ট্রিক, কৃমি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে খুবই গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও নিম পাতার কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। 
অতিরিক্ত নিম পাতা সেবনে লিভারের সমস্যা, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এছাড়াও গর্ভবতী নারীর সমস্যা হতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নিম পাতার সকল উপকারিতা এবং নিম পাতার ক্ষতিকর দিক গুলো বিস্তারিত আলোচনা করবো। এছাড়াও নিম পাতা কখন কিভাবে কি পরিমাণ খেতে হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানেন কি? । নিম পাতার রস খাওয়ার অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। নিম পাতা হলো প্রাকৃতিক ভেষজ ঔষধ। যা নিম পাতা থেকে রস বের করে তৈরি করা হয়।সকালে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়াই অনেক উপকার পাওয়া যায়। আপনার হজমের সমস্যা দূর করবে। 

পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখবে। আপনার যদি হজম সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার উচিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতা সেবন করার অভ্যাস করা। নিচে নিম পাতার রস খাওয়ার কিছু উপকারিতা দেওয়া হলো :
  • রক্ত পরিস্কার করে : এই নিম পাতার রসে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরের খারাপ টক্সিন বের করে দেয়। এতে আমাদের শরীরের রক্ত পরিস্কার হয়।
  • রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে : নিম পাতার রসে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণ থেকে রক্ষা করে রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • চুলের যত্নে : এই নিম পাতার রস আমাদের চুলের যত্নে খুবই গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে। এই নিম পাতার রসে থাকা উপাদান গুলো আমাদের মাথার উকুন ও খুশকি দূর করে চুল পড়া কমিয়ে চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
  • শরীরের জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে : নিম পাতার রসে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জীবাণু দূর করে।
  • পেটের সমস্যা দূর করে : আমাদের অনেকেই কৃমি সমস্যা দেখা যায়। এই নিম পাতার রস বা সরাসরি নিম পাতা ভেজে বিভিন্ন শুকনো খাবারের সাথে মিশিয়ে খেলে কৃমি দূর হয়।
  • দাঁত সুস্থ রাখতে সাহায্য করে : এই নিম পাতাতে রয়েছে অসাধারণ উপকারিতা। নিম পাতা সরাসরি চিবালে দাঁতের ব্যথা ও মাড়ি শক্ত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যাভিটি ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের যত্নে : এই নিম পাতা আমাদের শরীরের ত্বকের যত্নে খুবই গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে। এই নিম পাতা ব্লেন্ড করে সরাসরি মুখে ব্যবহার করলে ব্রণ,দাগ,ফোঁড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করে ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে : এই নিম পাতাতে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরের রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।এটি বিশেষ করে টাইপ -২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় তা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। এই নিম পাতার রস খেলে এমনিতেই অসাধারণ উপকার পাওয়া যায়। তবে সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে এর উপকারিতা আরো বেড়ে যায়। এই নিম পাতা সকালে খালি পেটে খেলে এতে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরের হজমশক্তি উন্নত করে ফলে খাবার সহজেই হজম হয়। 

এছাড়াও যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে অ্যালার্জির সমস্যা সমাধান হয়।এছাড়াও এই নিম পাতার রসে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরের লিভার, পাকস্থলী, কিডনি এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে আমাদের শরীরের অন্ত্রের অভ্যন্তরে থাকা ক্ষতিকারক পরজীবি গুলো ধ্বংস করে ফলে আমাদের শরীরের অন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। নিম পাতা খাওয়ার ধরা বাধা কোনো নিয়ম নেই। তবে কিছু নিয়ম অনুসরণ করে নিম পাতা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিয়ম অনুসরণ করে নিম পাতা খেলে আমাদের শরীরের হজমশক্তি ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।নিচে নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো :
  • নিম পাতার রস খাওয়ার জন্য প্রথমেই তাজা ৮-১০ টি নিম পাতা সংগ্রহ করুন।
  • এর পর নিম পাতাগুলো পরিস্কার পানি দিয়ে সুন্দর করে ধুয়ে পরিস্কার করুন।
  • এর পর শিলপাটা বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে সামান্য পানি মিশিয়ে ছ্যাকনা দিয়ে ছেঁকে নিন।
  • নিম পাতা অনেকটা তিতা হয়ে থাকে এজন্য আপনি সামান্য মধু বা গুর মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • একজন স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন আধা কাপ অর্থাৎ প্রায় ৬০-৭০ মি.লি. রসই যথেষ্ট।
ওপরে নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি নিম পাতার রস খেতে চান তাহলে ওপরের নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়া উত্তম। তবে প্রতিদিন নিম পাতার রস না খেয়ে সপ্তাহে ২-৩ দিন খাওয়াই যথেষ্ট।

নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা

নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা জানার জন্য অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন। শুধু যে নিম পাতা খেলেই উপকার পাওয়া যাবে বিষয়টি এরকম নয়। এই নিম পাতা দিয়ে গোসল করলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে এই নিম পাতা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ প্রতিরোধে এবং আমাদের ত্বক সুস্থ রাখতে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে।

নিম পাতা হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আমাদের শরীরের ঘামাচি, চুলকানি এছাড়াও আমাদের ত্বকের ব্রণ, একজিমা ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।এছাড়াও এই নিম পাতা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হওয়ায় আমাদের ত্বকের জীবাণু ও ছত্রাক সংক্রমণ দূর করে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। নিম পাতা ৫-১০ মিনিট পানিতে সেদ্ধ করে হালকা গরম পানি দিয়ে সপ্তাহে ২-৩ দিন গোসল করলে শরীর সুস্থ থাকবে।

নিম পাতার বড়ি খেলে কি হয়

নিম পাতার বড়ি খেলে কি হয় তা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন।ইতি মধ্যে আমরা নিম পাতার উপকারিতা সহ আরো অন্য অন্য বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে জেনেছি। এই নিম পাতা একটি ঔষধি পাতা যা আয়ুর্বেদে অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এই নিম পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বড়ি তৈরি করা হয়। 
এই নিম পাতার বড়ি খেলে অন্ত্রের কৃমি দূর করে।এছাড়াও আমাদের শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও আমাদের ব্রণ, চুলকানি, গ্যাস,কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন ১-২ টি নিম পাতার বড়ি খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। সপ্তাহে ২-৩ দিন খাওয়া উচিত।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। ইতি মধ্যে আমরা  নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছি ।  নিম পাতা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কিছু কিছু মানুষের শরীরে এই নিম পাতা ক্ষতি করতে পারে। তাই নিম পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই নিম পাতার ক্ষতিকর প্রভাব গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। নিচে নিম পাতার ক্ষতিকর দিক গুলো দেওয়া হলো :
  • খালি পেটে অতিরিক্ত পরিমানে নিম পাতা খেলে পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত নিম পাতা সেবনে কিছু কিছু মানুষের শরীরের কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
  • যাতের আগে থেকেই অতিরিক্ত পরিমানে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের ত্বকে চুলকানি, র‍্যাশ, লাল দাগ,ফুসকুড়ি এমনকি শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভবতী নারীদের এই নিম পাতা চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত। এই নিম পাতা গর্ভপাত ও শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ঘটতে বাধা প্রদান করে।
  • নিম পাতা অতিরিক্ত পরিমানে তিতা হওয়ায় এই নিম পাতা অতিরিক্ত পরিমানে খেলে মাথা ঘোরা ও শরীর দুর্বলতা অসুবিধা হতে পারে।
  • এই নিম পাতা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার করলে এই নিমের নির্যাস পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতিশীলতার ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • এই নিম পাতা বিশেষ করে শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই নিম পাতা শিশুদের অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়ালে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, পাতলা পায়খানা হতে পারে।
ওপরে নিম পাতার ক্ষতিকর দিক গুলো দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি নিম পাতা খেতে ভালো বেসে থাকেন। বা বিভিন্ন কারণে নিম পাতা খেযে থাকেন তাহলে ওপরের ক্ষতিকর দিক গুলো দেখে সাবধানে সীমিত পরিমাণে নিম পাতা খাবেন। এছাড়াও কোনো সমস্যা দেখা দিতে চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহন করুন।

শেষ কথা : নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।এছাড়াও নিম পাতা আমাদের শরীরের কোন কোন রোগের জন্য উপকারী এবং কখন কখন নিম পাতা খেলে ক্ষতিকর হতে পারে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি।আপনি যদি নিয়মিত নিম পাতা সেবন করতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার একটুও উপকারে আসে তাহলে একটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। প্রিয় পাঠক আজকের মতো এই পর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা ফ্রিল্যান্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url