খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার ১০টি উপকারীতা জানুন
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। আসলে
তুলসী গাছ এমন একটি ঔষধি উদ্ভিদ যার গুনাগুন সম্পর্কে লিখে শেষ করা যাবে। এর অনেক
উপকার রয়েছে।আজকে তুলসী পাতার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে খাওয়া উচিত না। নিয়ম
অনুসরণ করে তুসলী পাতা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আপনি যদি তুলসী পাতা খাওয়ার
নিয়ম সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পেজ সূচিপত্র : খালি পেটে তলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তুসলী গাছ একটি ঔষধি উদ্ভিদ । মানুষ প্রায় ৫০০০ বছর আগে থেকেই এই গাছের ব্যবহার
করে আসছে। এই তুলসী গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Ocimum Sanctum। হাজার হাজার বছর ধরে
এই গাছ আয়ুর্বেদিক স্বাস্থ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন :
গাজর খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে তুলসী গাছের পাতা শরীরের রোগ
প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি
পেতে এই তুলসী পাতা অনেক উপকারে আসে। তুলসী পাতা আমাদের সর্দি- কাশি থেকে মুক্তি
পেতে সাহায্য করে। এছাড়াও তুলসী পাতা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগের উপকার করে
।
তা নিয়ে বিস্তারিত নিচে আরো সুন্দর ভাবে আলোচনা করবো। আপনি যদি তুলসী পাতার
উপকারীতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি
মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
তুলসী পাতার পুষ্টিগুন
তুলসী পাতার পুষ্টিগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। তুলসী পাতার অনেক পুষ্টিগুন
রয়েছে। আপনি যদি তুলসী পাতা খান তাহলে আপনাকে অবশ্যই তুলসী পাতার পুষ্টিগুন
সম্পর্কে জানতে হবে।
তুলসী পাতার পুষ্টিগুন জেনে তুলসী পাতা খেলে অনেক ভালো উপকার পাওয়া যায়। তাহলে
চলুন তুলসী পাতার পুষ্টিগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নি।
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন কে
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাসিয়াম
- ফাইবার
তুলসী পাতা সেবনে আপনি ওপরের পুষ্টিগুন গুলো পেতে পারেন। এছাড়াও এই তুলসী পাতাতে
আরো অনেক গুনাগুন রয়েছে। আমাদের শরীরে তুলসী পাতা প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল
এবং অ্যান্টি - ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে।
তুলসী পাতা খাওয়ার প্রধান অপকারীতা
তুলী পাতা খাওয়ার প্রধান অপকারীতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। আপনি যদি নিয়মিত
তুলসী পাতা খেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
না জানেন।
আরো পড়ুন :
রাতে কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
তাহলে আজকের এই পোষ্টের এই অংশ ভালে করে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এখন আমরা খালি পেটে
তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলো বিস্তারিত আলোচনা করবো। তুলসী পাতা খাওয়ার
অনেকগুলো উপকারীতা রয়েছে তার মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো :
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : তুলসী পাতা খেলে আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই তুলসী পাতাতে রয়েছে শক্তিশালী
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ নিরাময় করে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য
করে। খালি পেটে তুলসী পাতার রস খেলে শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন দূর হয়। শরীরে
বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করতে পারেনা।
সর্দি- কাশিতে : আপনার যদি সর্দি বা কাশি হয়ে থাকে । অনেক উন্নত ঔষধ খেয়েও
ভালো হচ্ছে । আপনি চাইলে ঘরে বসেই সর্দি - কাশি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এজন্য
আপনাকে তুলসী পাতা রস করে খেতে হবে। তুলসী পাতার রস গরম পানির সাথে মিশিয়েও খেতে
পারেন।
হজমশক্তি উন্নত করতে : আপনি তুলসী পাতা খেলে আপনার হজমশক্তি উন্নত করতে
পারেন। এজন্য আপনাকে তুলসী পাতা রস করে খেতে হবে। তুলসী পাতার রস পাকস্থলী উন্নত
করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা আমাদের শরীরের পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস
ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
ত্বক উজ্জ্বল করতে : তুলসী পাতাতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যা আমাদের ত্বকের সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। খালি পেটে
তুলসী পাতা খেলে আমাদের শরীরের ভেতর থেকে টক্সিন বের করে ত্বক উন্নত করে। খালি
পেটে তুলসী পাতা খেলে আমাদের ত্বকের ব্রণ,দাগ- ছোপ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করতে
সাহায্য করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : এই তুলসী পাতাতে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরের
ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । এতে আমাদের শরীরের
হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। তুলসী পাতা থাকা উপাদানগুলো আমাদের রক্তনালীর দেওয়াল
গুলোকে মজবুত করে এবং খুব সহজেই রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে।
মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করে : তুলসী পাতা আমাদের শরীরের মূত্রনালীর
সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য খালি পেটে তুলসী পাতার রস খেতে হবে। তুলসী
পাতার রস শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতাতে থাকা
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মূত্রনালী সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : তুলসী পাতাতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে
ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেলের থেকে রক্ষা করে। এটি কোষগুলো অস্বাভাবিক থেকে
স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে : খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে আপনার ওজন কমবে। তুলসী
পাতাতে থাকা উপাদানগুলো আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতাতে ক্যালোরির
পরিমাণ খুবই কম থাকে। খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে আপনার অতিরিক্ত চর্বি কবে ওজন
নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে : তুলসী পাতা আমাদের শরীরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
রাখতে সাহায্য করে। এই তুলসী পাতাতে থাকা উপাদান রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য
করে। যারা টাইপ -২ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে
সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন।
তুলসী পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়মও পদ্ধতি
তুলসী পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুলসী পাতা অবশ্যই
নিয়ম অনুসরণ করে খেতে হবে তাহলে অনেক ভালো উপকার পাওয়া যাবে। সবকিছুরই নিয়ম আছে
।
নিয়মগুলো অনুসরণ করলে অনেক তাড়াতাড়ি ভালো উপকার পাওয়া যায়। চলুন তুলসী পাতা
খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নি।
তুলসী পাতার রস : তুলসী পাতা রস করে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
এজন্য আপনাকে প্রথমেই গাছ থেকে তুলসী পাতা তুলে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে পিষিয়ে রস
বের করতে হবে। এবার রস গুলো খেয়ে নিন। দ্রুত তুলসী পাতার উপকার পেতে রস করে খান।
তুলসী পাতা চিবানো : তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। এজন্য
আপনাকে প্রথমেই গাছ থেকে তুলসী পাতা তুলে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ৪-৫ টি পাতা মুখে
দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিন। তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুলো সরাসরি শরীরে
চলে যায়।
তুলসী পাতা গুঁড়ো : তুলসী পাতা গুঁড়ো করে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
এজন্য আপনাকে প্রথমেই গাছ থেকে তুলসী পাতা তুলে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে রোদে
শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে । গুঁড়ো করা তুলসী পাতা আপনি চাইলে মধু মিশিয়েও খেতে
পারেন বা পানি দিয়েও খেতে পারেন।
তুলসী পাতার চা : আপনি চাইলে তুলসী পাতার চা বানিয়েও খেতে পারেন। আপনি
চাইলে গরম পানির সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে পারেন বা চায়ের সঙ্গে তুসলী
পাতার রস মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে শরীর সুস্থ থাকে এবং শরীরের সর্দি - কাশি দূর
করতে সাহায্য করে।
তুলসী গাছের পরিচিতি
তুলসী পাতার পরিচিতি আমাদের জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৫০০০ বছর আগে থেকেই
তুসলী পাতা বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই গাছ গুলো ভারতের উওর
দিকে খুব ভালো জন্মায়।এই তুলসী পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum Sanctum । এই তুলসী
গাছের ইংরেজি নাম হলো Holy Basil। এই তুসলী গাছ প্রায় সকল জায়গায় পাওয়া যায়। এই
তুলসী পাতা স্বাদে এবং সুগন্ধিতে তীক্ষ্ণ হয়। যা অনেকেই খেতে পারেন না।
আরো পড়ুন :
খালি পেটে লেবু খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
এই তুলসী পাতা চকচকে ডিম্বাকৃতির হয়। খুবই মসৃণ এবং চারিদিকের পান্তগুলো সামান্য
দাঁতযুক্ত হয়। এই তুসলী গাছ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বেশি ব্যবহার করে। হিন্দুদের
বিশ্বস্ত একটি পবিত্র উদ্ভিদ। হিন্দুরা এই গাছে তাদের দেবিদের পুঁজো করে । তুলসী
গাছ প্রধানত চার প্রকার। বাবুই তুলসী,সাদা তুলসী,রাম তুলসী, কালচা তুলসী।
তুসলী পাতা খাওয়ার কিছু সতর্কতা
তুসলী পাতা খাওয়ার কিছু সতর্কতা সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই জুরুরি। আনরা জানি
যেখানে ভালো আছে সেখানে একটু খারাপ থাকবেই। তুলসী পাতা খাওয়ার সতর্কতা না জেনে
তুসলী পাতা খেলে অনেক সমস্যাই পড়তে হতে পারে। তাই তুলসী পাতা খেলে কি কি সমস্যা
হতে পারে জানতে হবে।
আপনি যদি তুলসী পাতা খাওয়ার সতর্কতা গুলো না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই
আর্টিকেলের এই অংশ ভালো করে পড়ুন। তাহলে চলুন তুলসী পাতা খাওয়ার কিছু সতর্কতা
সম্পর্কে জেনে নি।
- গর্ভবতী মহিলাদের তুলসী পাতা খাওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে।
- তুলসী পাতা অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না পরিমাণ মতো সেবন করুন।
- যেসব মহিলাদের বাচ্চা বুকের দুধ পান করে তাদের তুসলী পাতা খাওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে।
- যারা রক্ত পাতলা করা ঔষধ সেবন করতেছেন তারাও এই তুলসী পাতা সেবনে বিরত থাকুন।
- যারা বিভিন্ন রোগের ঔষধ সেবন করতেছেন তারাও এই তুলসী পাতা সেবনে সাবধান থাকুন।
- পরিশেষে একজন চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে তুলসী পাতা সেবন করুন।
শেষ কথা : খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা
বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি তুলসী পাতা কিভাবে কখন খাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। তুলসী পাতার পুষ্টিগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি
আপনাকে উক্ত সকল বিষয়গুলো সুন্দর করে বোঝাতে পেরেছি।
আজকের এই আর্টিকেল টি যদি আপনার একটও কাজে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে
যাবেন । এবং আপনার পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। প্রিয় পাঠক
আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
দ্যা ফ্রিল্যান্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url